অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ প্রচুর। যদিও এই ফলটি আমাদের দেশে সকল অঞ্চলে চাষ হয় না। কিন্তু বর্তমানে চাপাইনবাবঞ্জের হর্টিকালচারে,ও ডাকার সাভারে অ্যাভোকাডো ফলের চাষ হচ্ছে। এই ফলটি খুব পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন মেক্সিকো,সেন্ট্রাল আফ্রিকা, ইত্যাদি দেশে পাওয়া যায়। আর সেন্ট্রাল আফ্রিকার জাতীয় ফল অ্যাভোকাডো ।অ্যাভোকাডো ফলের পুষ্টিগুণ রয়েছে প্রচুর। এই ফলে প্রচুর পরিমানে ক্যালরি, ভিটামিন সি, ই, কে এবং বি -6 এর পাশাপাশি রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফোলেট, পেন্টোথেনিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম আছে। ফলটি খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু,এবং যৌবন শক্তি ধরে রাখতে এই ফলের জুরি নেয়। এই ফলটি সকলে খেতে পারে কারণ কোন ক্ষতিকর উপাদান এতে নেয়। আর ও অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা জানবো।
আর ও পড়ুন-বেলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ – স্ট্রবেরির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
অ্যাভোকাডো ফল পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। তাছাড়া এই ফলে রয়েছে আমাদের শরীর সুস্থ রাখার দারুন উপাদান। এতে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। এই ফলে ফ্যাটের পরিমান যতেস্ট। তাই স্বাস্থ্যবান দেহের জন্য অ্যাভোকাডো ফলের প্রয়োজন অনেক। হালকা শরীরের জন্য নিয়মিত অ্যাভোকাডো ফল খেলে শরীর স্বাস্থ্যকর হবে। আরো ও কিছু উপকারিতা জেনে নিই-
১. হার্টের জন্য অ্যাভোকাডো ফলের তুলনা হয় না। এটি খুব ভালো একটি ফল যা আমাদের হার্টকে অনেক সুস্থ সবল রাখে।অ্যাভোকাডোতে বিটা-সিটোস্টেরল নামে একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ স্টেরল আউন্স প্রতি 25 মিলিগ্রাম থাকে। স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য বিটা-সিটোস্টেরল এবং অন্যান্য উদ্ভিদ স্টেরলগুলির খুব ব্যবহার করা হয়। তাই নিয়মিত অ্যাভোকাডো খান হার্টকে সুস্থ রাখুন।
২. অ্যাভোকাডো চোখের জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। কারন অ্যাভোকাডোতে লুটেইন এবং জেক্সানথিন রয়েছে, এই দুটি ফাইটোকেমিক্যাল চোখের টিস্যুগুলিতে কেন্দ্রীভূত হয় এবং তারা অতিবেগুনী আলো সহ ক্ষয়কে হ্রাস করতে সহায়তা করে। এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা সরবরাহ করে।
৩. বেশি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ:
মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও পুষ্টি উপাদান সহজে পায় না। আর পটাসিয়াম দেহের কোষ গুলিতে বৈদ্যুতিক গ্রেডিয়েন্টগুলি বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনে সহায়তা করে।পটাশিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি অ্যাভোক্যাডোতে । একটি ৩.৫-আউন্স (১০০-গ্রাম) কলাতে ১০% এবং অ্যাভোক্যাডোতে ১৪% পটাশিয়াম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ পটাশিয়াম রক্তচাপ হ্রাস করে যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি ফেইলিউরের ঝুঁকি কমায়।
৪.উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ:
অ্যাভোক্যাডোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। ফাইবার এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা আমাদের ওজন হ্রাসে অবদান রাখে,তাছাড়া রক্তে শর্করার স্পাইকগুলি হ্রাস করে এবং সাথে আরো অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়। দ্রবণীয় ফাইবার আমাদের অন্ত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ অন্ত্র-ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য, যা শরীরের অনুকূল কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ৩.৫-আউন্স (১০০-গ্রাম) অ্যাভোক্যাডোতে ৭ গ্রাম ফাইবার আছে, যা RDA এর ২৭%।অ্যাভোক্যাডোতে থাকা প্রায় ২৫% ফাইবার দ্রবণীয় এবং ৭৫% অদ্রবণীয়।
৫. অ্যাভোক্যাডো কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তরকে কমিয়ে দেয়:
হৃদরোগের কারণে বিশ্বে বহু লোকের প্রতিবছর প্রাণ যায়। আর কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস, রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ। তবে আটটি গবেষণায় এইসকল ঝুঁকির উপর অ্যাভোক্যাডোর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে। এই অধ্যয়নগুলিতে প্রমাণিত হয়েছে যে অ্যাভোক্যাডো কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। তাছাড়া ২০% পর্যন্ত রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে। আর এলডিএল কোলেস্টেরল ২২% পর্যন্ত কমিয়ে আনে। এবং এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরল ১১% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
৬. নিয়মিত অ্যাভোক্যাডো গ্রহণকারীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকে:
একটি সমীক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে NHANES জরিপে অংশ নেওয়া ১৭,৫৬৭ জন অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই জরিপে অ্যাভোক্যাডো গ্রাহকরা অনেক স্বাস্থ্যবান ছিলেন। তাদের পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল এবং বিপাকীয় সিনড্রোম হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অর্ধেক ছিল, যা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
৭. অ্যাভোক্যাডোর মধ্যকার ফ্যাট আমাদের পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে:
অ্যাভোক্যাডোতে ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং পাশাপাশি ক্যারোটিনয়েডের মতো এন্টিঅক্সিড্যান্টও রয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সালাদ বা রান্নায় অ্যাভোক্যাডো বা অ্যাভোক্যাডো তেল যোগ করা হলে এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শোষণকে ২.৬- থেকে ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে।।
৮. অ্যাভোকাডো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে ।ক্যান্সার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে অ্যাভোক্যাডো যথেষ্ট উপকারী। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এটি মানব লিম্ফোসাইটে কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। অ্যাভোক্যাডো প্রোস্টেট ক্যান্সার কোষগুলির বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
আর ও পড়ুন-কোন দুধের কত পুষ্টিগুণ – কোন মাংসের কত পুষ্টিগুণ
অ্যাভোকাডোর পুষ্টিগুণ রয়েছে প্রচুর। আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত অ্যাভোকাডো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলতে হবে। যেনে নিই অ্যাভোকাডোর পুষ্টি উপাদান-
উপাদান পরিমান
প্রতি ৫০ গ্রামে আছে
ক্যালরি 80
মোট ফ্যাট 8 জি
স্যাচুরেটেড ফ্যাট 1 জি
পলিয়ুনস্যাচুরেটেড ফ্যাট 1 জি –
মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট 5 জি –
কোলেস্টেরল 0 মি.গ্রা
সোডিয়াম 0 মি.গ্রা
মোট কার্বোহাইড্রেট 4 জি
ডায়েট্রি ফাইবার 3 জি
মোট সুগার 0 গ্রাম –
0 গ্রাম যুক্ত সুগার অন্তর্ভুক্ত –
প্রোটিন 1 জি –
ভিটামিন ডি 0 এমসিজি
ক্যালসিয়াম 10 মিলি
আয়রন 0.3mg
পটাসিয়াম 250 মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ 0 এমসিজি
ভিটামিন সি 4 এমজি
ভিটামিন ই 1 এমজি
ভিটামিন কে 11 এমসিজি
থায়ামিন 0.04mg
রিবোফ্লাভিন 0.1mg
নায়াসিন 1 এমজি
ভিটামিন বি 6 0.1 মিলিগ্রাম
(0 এমসিজি ফলিক অ্যাসিড)
45 এমসিজি ডিএফই 10%
পেন্টোথেনিক অ্যাসিড 0.7mg
ফসফরাস 30 মিলি
ম্যাগনেসিয়াম 15 এমজি
দস্তা 0.3mg
তামা 0.1mg
ম্যাঙ্গানিজ 0.1mg