রসুনের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ প্রচুর। আমদের খুব পরিচিত মসলা হিসাবে রসুন খাদ্যে ব্যবহার করি। আমাদের বিভিন্ন রান্নাতে রসুন ব্যবহার করে থাকি। মাংস,ডিম বিভিন্ন শুটকি রান্নতে রসুন ছাড়া চলেয় না। রসুনের উপকারিতা কি তা অনেকেই জানে না। বর্তমানে রসুন রান্নার পাশাপাশি চিকিৎসাতেও ভালো ব্যবহার হচ্ছে। আর রসুনে রয়েছে প্রচুর সালফার যাকে অ্যাসিলিন বলে। এই উপাদান শুধু কাঁচা রসুনে পাওয়া যায়। অনেক গুণে ভরপুর অ্যাসিলিন। এক্ষেত্রে রসুনের উপকারিতা কি আমরা সহজে জানবো।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা রসুনে আছে প্রায় ১৫০ ক্যালোরি এবং ৩৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬.৩৬ গ্রাম প্রোটিন । তাছাড়া রসুনে রয়েছে
ভিটামিন বি ১, বি ২, বি ৩ ও বি ৬,ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি,ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ফোলেট,ম্যাঙ্গানিজ,
পটাশিয়াম, আর জিঙ্ক । এতে বুঝা যায় রসুনের পুষ্ঠিগুণ কত। প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয় রসুনকে। আবার অনেকে
এটাকে গরিবের পেনিসিলিনও বলে থাকেন।
কেন আমরা নিয়মিত কাঁচা রসুন খাব? রসুন খাওয়ার উপকারিতা আগে জানতে হবে। কারণ কোন খাবার খাওয়ার আগে তার
উপকারিতা সম্পর্কে জানলে,তার প্রতি আগ্রহ দ্বীগুন বেড়ে যায়।রসুনের পুষ্টিগুণ যেহেতু প্রচুর রয়েছে এর কারণে আমরা রসুন খাব।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক বা দুই কোয়া রসুন চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে প্রচুর উপকার পাওয়া যায়। যদিও প্রথম দিকে
চিবিয়ে খাওয়া কষ্ট তার পরেও আসতে আসতে অভ্যাসে পরিনত হবে। তাছাড়া রসুন কে কুচি করে কেটে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে খেতে
পারেন।এতে দারুন উপকার পাবেন। গ্যাস্টিক,রক্তপরিশুদ্ধ,সর্দিকাশি, কৃমি,ত্বকের যন্ত ইত্যাদি অনেক কাজে উপকার আসে। এখন বুজতে
পারছেন রসুন খাওয়ার উপকারিতা কত।
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাতে প্রতিদিন খালিপেটে রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ রসুন আমাদের হাইপার-টেনশন
কমাতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখতে ও রক্তের ঘনত্ব কমাতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর জন্য হার্টও সুস্থ
থাকে। আমাদের ধমনীর প্রাচীর শক্ত হলে হার্টের বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। আর রসুনে থাকা সালফারের যৌগ ধমনীর প্রাচীরকে সুস্থ রাখে।
এর জন্য শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। আর রসুন জমাট বাধা রক্ত পাতলা করতে সাহায্য় করে। ফলে হার্ট সুস্থ রাখতে রসুন খাওয়ার উপকারিতা
রয়েছে।
কাঁচা রসুন সেবনে আমাদের রক্তকে পরিশুদ্ধ করে, এর ফলে আমাদের ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়। প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে
দু’কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ব্রণের সমস্যা সমাধান হবে। এর সাথে প্রচুর পরিমানে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
কৃমির সমস্যা সব বয়সের মানুষের কম-বেশী দেখা যায়। তবে বাচ্ছাদের এই কৃমি সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বিভিন্ন গবেষনা থেকে জানা
গেছে রসুন বাচ্ছাদের কৃমি দূর করতে সাহায্য করে থাকে।ছোট বাচ্ছাদের অল্প পরিমানে রসুন খাওয়াতে পারলে কৃমি থেকে পরিত্রান পাওয়া
যেতে পারে। এছাড়া সব বয়সের মানুষের কৃমির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
যাহাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের জন্য রসুন একটি ভালো ওষুধ হতে পারে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমানোর জন্য রোজ সকালে উঠে রসুন খান।
এতে অনেক উপকার পাবেন। তাছাড়া নিউমোনিয়া, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি গুরুতর রোগের চিকিৎসার জন্য রসুন ব্যবহার হয়।
রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতেই বোঝা যায় রসুনের পুষ্টিগুণ যতেষ্ট।
বন্ধ নাকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সকালে উঠে ২-৩ কোয়া রসুন খান, বা রসুন থেঁতো করে চা বানিয়ে খান। এছাড়া নিয়ম করে রসুন খেয়ে
গেলে সর্দিকাশি আর আপনার কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।সর্দিকাশিতে রসুন সবসময় ভালো কাজ করে।
প্রাচীনকাল থেকে রসুন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। রসুনে বিদ্যমান অ্যালিসিন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়াকে
ধ্বংস করে, তাই রসুনকে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক বলা হয়। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল, প্যারাসাইটিক ইনফেকশন সারানোর জন্য রসুন ব্যবহার করা
হয়ে থাকে।
প্রতিদিন নিয়ম করে কাঁচা রসুন খেলে স্ট্রমাক আর কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে। তাছাড়া রসুনে থাকা অ্যালাইল সালফাইড প্রস্টেটের
ক্যান্সার কোলন ক্যান্সার, স্তন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকেও কমায়।
রসুন ত্বকের সারফেসে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ও ব্রণর সম্ভাবনা কমায়। ফ্রি-র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব ও কোলাজেনের ভাঙ্গন
থেকে রসুন আমাদের ত্বককে প্রতিনিয়ত রক্ষা করে। কোলাজেনের ভাঙনের ফলে আমাদের ত্বক বয়স্ক ছাপ দেখায়। রসুন আমাদের ত্বকের
ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং-এর কাজ করে ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে।রসুন বাতের ব্যথা সারায় এবং হাতে পায়ে জয়েন্টের ব্যথা
দূর করে।
রসুনের উপকারিতা এর পাশাপাশি কিছু রসুনের অপকারিতা রয়েছে
রসুন খাওয়ার ফলে মাথাব্যথা অথবা বমির প্রাদুর্ভাব হলে রসুন না খাওয়াই ভালো।
যাদের এলার্জি জাতিয় সমস্যা আছে তাদের রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।।
প্রতিদিন ২/৩ কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া ঠিক না।
গর্ভবর্তী এবং দুগ্ধদানকারি মায়েদের কাঁচা রসুন খেলে অনেক রকমের সমস্যা হতে পারে, তাই তাদের রসুন না খাওয়াই ভালো।
অতিরিক্ত রসুন খেলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, বমিভাব হতে পারে।